রসায়ন বিভাগের উদ্দেশ্য
রসায়ন বিভাগের অধীনে মোট 2টি শাখা আছে-
১। ফাইবার কেমিষ্ট্রি শাখা
২। ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিষ্ট্রি শাখা
ক) ফাইবার কেমিস্ট্রি শাখার উদ্দেশ্য
১. এই শাখায় পাটের যথাযথ এবং বহুমূখী ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য পাট ও সমজাতীয় আঁশ ফসলের ভৌত রাসায়নিক গুনাগুণ নির্ণয় করে থাকে।
২. এই শাখার অধীনে সাধারণত পাট আঁশের এনালাইসিসসহ বিভিন্ন রাসায়নিক ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে পাট আশেঁর মানন্নোয়ন করা ।
৩. ঔষধের বেস মেটারিয়াল তৈরী করার লক্ষ্যে পাট থেকে সেলুলোজ তৈরী করে মাইক্রোক্রিস্টালাইন সেলুলোজ (MCC) তৈরী করা|
৪. সেলুলোজ ডেরিভেটিব যেমন: কার্বোক্সি মিথাইল সেলুলোজ (CMC), সেলুলোজ এসিটেট ইত্যাদির মাধ্যমে বিভিন্ন থিকি মেটারিয়ালস হিসাবে ঔষধ কোম্পানিতে এবং ভিসকোস ম্যাটেরিয়াল হিসাবেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করা ।
৫. মিনারেল অয়েল এর পরিবর্তে ভেজিটেবল অয়েল দিয়ে জুট ব্যাচিং ইমালশন তৈরী করা।
খ) ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিস্ট্রি শাখার উদ্দেশ্য
রসায়ন বিভাগের এ পর্যন্ত গবেষণার অগ্রগতি /সাফল্য
প্রযুক্তির বর্ণনা
ক্রমিক নং |
প্রযুক্তির শিরোনাম
|
প্রযুক্তির বর্ণনা
|
০১. |
পাট আঁশ থেকে মাইক্রোক্রিস্টালাইন সেলুলোজ (এমসিসি) প্রস্তুতকরণ । |
এমসিসি (মাইক্রোক্রিস্টালাইন সেলুলোজ) সেলুলোজ-জাত একটি প্রয়োজনীয় দ্রব্য । পাট আঁশে প্রায় 58-63% সেলুলোজ আছে এবং ইহার বেশীর ভাগ (70-80)% ক্রিস্টালাইন অবস্থায় পাট তন্তুর অবকাঠামোতে অবস্থিত । বৈজ্ঞানিক নিরীক্ষায় প্রতীয়মান হয়েছে যে, কার্পাস তুলায় 95% সেলুলোজ থাকলেও তুলনামূলকভাবে উহাতে পাট আঁশ থেকে প্রাপ্ত সেলুলোজ থেকে ক্রিস্টালাইন অংশ কম আছে। সুতরাং দেশীয় কাঁচামাল পাট থেকে এমসিসি তৈরি করায় ঔষধ শিল্প, টেক্সটাইল শিল্প, কসমেটিকস শিল্প ও খাদ্য শিল্পের উৎপাদিত মূল্য কমে যাবে । পাটকে হালকা ক্ষারীয় দ্রবনে স্কাওরিং করে ক্লোরিনেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উহা থেকে প্রথমে আলফা সেলুলোজ তৈরী করা হয়। এই আলফা সেলুলোজকে একটা নির্দিষ্ট চাপ, তাপ ও পরিমিত সময়ে এসিড হাইড্রোলাইসিস করে উহাকে নির্দিষ্ট আরপিএম এর ব্লেন্ডার দ্বারা চুর্ন করে অশোধিত মাইক্রোক্রিস্টালাইন সেলুলোজ তৈরী করা হয় । এই অশোধিত দ্রব্য থেকে প্রয়োজনীয় শোধন প্রক্রিয়ার দ্বারা বিভিন্ন রকমের এবং ভিন্ন ভিন্ন ব্যবহারের মাইক্রোক্রিস্টালাইন সেলুলোজ তৈরী করা হয়েছে। অতপর প্রস্তুতকৃত এমসিসির বৈশিষ্ট্যসমূহ FTIR দ্বারা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এমসিসি বিভিন্ন শিল্পে যেমন: ঔষধ শিল্পে ও কাগজ শিল্পের বাইন্ডার হিসাবে, প্রিন্টিং এর কাজে থিকেনার, সাবান ও ডিটারজেন্ট শিল্পে এবং তৈল উত্তোলনে কুপ খননের কাজে এন্টিফোমিং হিসাবে ব্যবহার করা হয়। |
0২. |
রাসায়নিক ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে অগ্নিরোধী পাট এবং পাট জাত ফেব্রিক উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন |
সোনালী আঁশ পাটের বর্তমান অবস্থার উন্নয়নে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে পাটের চাহিদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে রসায়ন বিভাগের শিল্প রসায়ন শাখায় অপেক্ষাকৃত সহজলভ্য ও সুলভ মূল্যের রাসায়নিক দ্রব্যের সাহায্যে টেকসই অগ্নিরোধী প্রযুক্তিটি উন্নয়নের গবেষণা কাজ চলমান। 2019 সালে উক্ত অগ্নিরোধী প্রযুক্তিটি হস্তান্তরের জন্য বিজেআরআই এবং ট্রায়ো ব্রাদার্স লিমিটেড এর সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় । বিজেআরআই উদ্ভাবিত প্রযুক্তির মাধ্যমে অগ্নিরোধী পাট আঁশ এবং পাটের ফেব্রিক ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রকার ইনসুলেটিং ম্যাটেরিয়াল, ম্যাট্রেস, গাড়ীর বডিসহ বিভিন্ন অংশ, ম্যাট, পর্দা, তাবু, এ্যাকুয়াসটিক প্যানেল বোর্ড, বিল্ডিং-ব্লকস, দমকল বাহিনী, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ব্যবহার উপযোগী ওভারকোট সহ অন্যান্য পোশাক তৈরী করা যাবে । |
0৩. |
শিল্পে ব্যবহারের জন্য ভেজিটেবল অয়েল দিয়ে জুট ব্যাচিং ইমালশন তৈরী করার প্রযুক্তি উদ্ভাবন। |
প্রস্তুতকৃত ভেজিটেবল অয়েল ইমালশন (20-25%) স্প্রে করার মাধ্যমে প্রথমে পাট আঁশকে ভিজানো হয় সফেনিং মেশিনের সাহায্যে। পরবর্তীতে জুট প্রসেসিং মেশিনের বিভিন্ন ধাপ যেমন কার্ডিং, ড্রয়িং এবং স্পিনিং অতিক্রম করে সুতা তৈরী করা হয়। উল্লেখ্য যে, জেমস ম্যাকি এবং সন্স লিমিটেডের (বেলফাস্ট, যুক্তরাজ্য ) জুট মিল যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রস্তুতকৃত ইমালশন সুগন্ধযুক্ত এবং উদ্ভাবিত ইমালশনের উচ্চ ফ্লুইডিটির বৈশিষ্ট্যযুক্ত রয়েছে যা ফাইবারগুলিতে মসৃনভাবে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। ভেজিটেবল অয়েল দ্বারা প্রক্রিয়াজাত সুতার সূচকগুলি জেবিও প্রক্রিয়াজাত সুতাগুলির সাথে তুলনামূলকভাবে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।প্রযুক্তিটি ব্যবহারের উপযুক্ত ক্ষেত্র হচ্ছে পাট শিল্প। |
0৪. |
পরিবেশ বান্ধব এবং সহজ পদ্ধতিতে পাট কম্পোজিট হইতে গৃহ নির্মাণ সামগ্রী ও আসবাবপত্র তৈরী করণ প্রযুক্তি উদ্ভাবন।
|
বহুল প্রচলিত ভারী এবং ভঙ্গুর বিল্ডিং নির্মাণ উপকরণ যেমন ইট, পাথর, মর্টার, গ্রানাইট ইত্যাদি ধাক্কা জনিত প্রচণ্ড আঘাতযুক্ত শোষণ করে না বরং এটিকে আরও বাড়িয়ে তোলে, যার ফলে ধ্বংসের পরিমান বৃদ্ধি পায়। ভূমিকম্প-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে ব্যবহারের জন্য নির্মাণের উপাদানগুলি এমন হওয়া উচিত যা তারা ভূমিকম্পের কম্পন শক্তি শোষণ করবে এবং ধ্বংসের পরিমান হ্রাস করবে। শক্ত, দীর্ঘস্থায়ী এবং হালকা ওজনের কম্পোজিট পণ্যগুলি পাট (হেসিয়ান কাপড়) এবং পলিমারিক পদার্থের সংমিশ্রণে তৈরি করা হয়েছে। পাট কম্পজিটে ধাতব পদার্থ ব্যবহার করা হয় না বলে মরিচা ধরে না। এটা সাধারন ধাতব পদার্থের চাইতে অনেক বেশি হালকা, শক্ত এবং টেকসই। ইহা পরিবেশ বান্ধব এবং এতে পরিবেশের ক্ষতিকর কোন উপাদান নেই। পাট-কম্পজিট মজবুত, দৃঢ় এবং টেকসই । তাই পাট-কম্পোজিট দ্বারা টিন এবং অন্যান্য ছাদ উপকরণ, আবাসন নির্মাণ সামগ্রী, হাউসহোল্ড উপাদান এবং আসবাব-পত্র যেমন চেয়ার, টেবিল, দরজা তৈরী করা যায় । ইহাতে পাটের ব্যাপক ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে । |
০৫. |
পাট কাঠি থেকে চারকোল, সক্রিয় কার্বন, কম্পিউটার ও ফটোকপিয়ার কালি তৈরি করণ|
|
সহজ পদ্ধতিতে এবং স্বল্প খরচে পাটকাঠিকে কার্বনাইজ করে চারকোল তৈরী করা যায় । এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা খুবই সহজসাধ্য ও সুবিধাজনক। বিশেষ বিশেষ কাজে যেমন ফটোকপি ও কাটিজের মূল্যবান কালি হিসাবে এবং ব্যাটারী তৈরীতে, পানি ফিল্টার তৈরীতে কাঁচামাল হিসেবে, ফেসওয়াস ও প্রসাধনী তৈরীতে চারকোল ব্যবহৃত হয়। পাটকাঠির ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেলে আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির উন্নতি সাধন ও পাট চাষে চাষীদের আগ্রহ বাড়বে। |
০৬. |
পাটকে সালফোনেশান/ইথারিফিকেশন পদ্ধতিতে মেডিফিকেশান করে টেক্সটাইল শিল্পে ব্যবহারকরন |
পাটকে সালফোনেশন ও ইথারিফিকেশন পদ্ধতিতে মোডিফিকেশন করে তুলা ও অন্যান্য সিনথিটিক ফাইবারের সাথে মিশ্রিত করে কটন সিস্টেমে সুতা ও কাপড় তৈরি করার প্রযুক্তি আবিষ্কার করা হয়েছে। উক্ত কাপড় দ্বারা বিভিন্ন ধরনের গার্মেন্টস পণ্য তৈরি করা হয়েছে। ইহার ফলে পাটকে টেক্সটাইল শিল্পে ব্যবহারের এক উজ্জ্বল সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচন হয়েছে। |
রসায়ন বিভাগের গবেষণার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
১. স্বল্পমেয়াদী (২০২৫ সাল পর্যন্ত)
২.মধ্যমেয়াদী (২০৩৫ সাল পর্যন্ত)
৩. দীর্ঘ মেয়াদী (২০৪৫ সাল পর্যন্ত)
|
|||
|
|||
|
|||
|
রসায়ন বিভাগ (শাখা অনুযায়ী জনবল)
ফাইবার কেমিস্ট্রি শাখা
ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিস্ট্রি শাখা