বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) দেশের অন্যতম প্রাচীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ১৯০৪ সালে স্যার আর.এস. ফিনলো’র নেতৃত্বে ঢাকায় প্রথম পাটের গবেষণা শুরু হয়। অত:পর ১৯৩৬ সালে ইন্ডিয়ান সেন্ট্রাল জুট কমিটির (ICJC) আওতায় ঢাকায় জুট এগ্রিকালচারাল রিসার্চ ল্যাবরেটরী প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পাটের গবেষণা শুরু হয়। ১৯৫১ সালে ইন্ডিয়ান সেন্ট্রাল জুট কমিটির (ICJC) স্থলে পাকিস্তান সেন্ট্রাল জুট কমিটি (PCJC) গঠিত হয় এবং বর্তমান স্থানে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপিত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে এ্যাক্টের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই)। বর্তমানে বিজেআরআই তিনটি ধারায় গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছেঃ (১) পাটের কৃষি তথা পাট ও পাটজাতীয় আঁশ ফসলের উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন, উৎপাদন ব্যবস্থাপনা এবং বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ সংক্রান্ত গবেষণা; (২) পাটের কারিগরী তথা মূল্য সংযোজিত বহুমুখী নতুন নতুন পাট পণ্য উদ্ভাবন এবং প্রচলিত পাট পণ্যের মানোন্নয়ন সংক্রান্ত গবেষণা এবং (৩) পাটের টেক্সটাইল অর্থাৎ পাট এবং তুলা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম আঁশের সংমিশ্রনে পাট জাত টেক্সটাইল পণ্য উৎপাদন সংক্রান্ত গবেষণা এবং বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপনা।
বর্তমানে বিজেআরআই এর কৃষি গবেষণায় ৬টি, কারিগরী গবেষণায় ৪টি, জুট টেক্সটাইল গবেষণায় ১টি এবং পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগ বিভাগসহ মোট ১২টি বিভাগ রয়েছে। এছাড়াও কৃষকদের সময় উপযোগী চাহিদা ও প্রয়োজন মোতাবেক পাটের অঞ্চল ভিত্তিক কৃষি গবেষণার জন্য মানিকগঞ্জে পাটের কেন্দ্রীয় কৃষি পরীক্ষণ স্টেশন এবং রংপুর, ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জ ও চান্দিনায় (কুমিল্লা) চারটি আঞ্চলিক পাট গবেষণা কেন্দ্র এবং তারাবো (নারায়নগঞ্জ), মনিরামপুর (যশোর) ও কলাপাড়ায় (পটুয়াখালী) তিনটি পাট গবেষণা উপকেন্দ্র এবং নশিপুরে (দিনাজপুর) একটি পাট বীজ উৎপাদন ও গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। উল্লেখ্য যে, পাট, কেনাফ ও মেস্তা ফসলের দেশী বিদেশী বীজ সংরক্ষণ ও উন্নত জাত উদ্ভাবনে গবেষণা কাজে ব্যবহারের জন্য বিজেআরআইতে একটি জিন ব্যাংক রয়েছে। এ জিন ব্যাংকে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগৃহিত পাট ও সমগোত্রীয় আঁশ ফসলের প্রায় ৬০০০ জার্মপ্লাজম সংরক্ষিত আছে। সম্প্রতি বিজেআরআই কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন “পাট বিষয়ক মৌলিক ও ফলিত গবেষণা” প্রকল্পের অর্থায়নে গবেষণার মাধ্যমে জীব প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশী ও তোষা পাট এবং ধইঞ্চার জিনোম সিকুয়েন্স উন্মোচন করে গবেষণার উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করা হয়েছে যা বিশ্বে বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে।